সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০১০

ঢাকাই খাবার : নাসির হোটেলের নেহারি

ঢাকাই খাবারনাসির হোটেলের নেহারি ধোলাইখালের লোহালক্কড়ের দোকানগুলো পার হয়ে কলতাবাজার নাসির উদ্দিন সরদার লেনে পৌঁছলেই চোখে পড়বে সাদামাটা একটি রেস্টুরেন্ট। নাম নাসির হোটেল। এর প্রধান আকর্ষণ সকালের নাশতার সঙ্গে নেহারি। এ খাবারটির স্বাদ নিতে ফজরের নামাজের পরপরই লাগে ভিড় ।

ঢাকার আদি বাসিন্দাদের সকালের নাস্তায় প্রিয় একটি খাবার নানরুটির সঙ্গে নেহারি। অনেকের পছন্দ আবার নেহারি-পরোটার যুগলবন্দিটাও। আর নেহারি নামের এ খাবারটি তৈরির প্রধান উপকরণ গরুর পায়ের হাড়। এ হাড় জোগাড় করাও কিন্তু খবি একটা সহজ কাজ নয়। নেহারি তৈরির পদ্ধতিটাও বেশ জটিল। সব মিলিয়ে ঘরে নিয়মিত নেহারি তৈরি হাঙ্গামার ব্যাপারই বটে। কিন্তু ঢাকাইয়াদের অনেকেরই প্রতিদিনের নাস্তার সঙ্গে চাই নেহারি। তাই পুরান ঢাকার প্রায় সব রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন তৈরি হয় মুখরোচক এ খাবার। তবে মজাদার এ খাবার তৈরির ক্ষেত্রে অন্য সব হোটেলের চেয়ে এগিয়ে আছে নাসির হোটেল।
ধোলাইখালের লোহালক্কড়ের দোকানগুলো পার হয়ে কলতাবাজার নাসির উদ্দিন সরদার লেনে পেঁৗছলেই চোখে পড়বে সাদামাটা হোটেলটি। এর প্রধান আকর্ষণ সকালের নাস্তার সঙ্গে নেহারি। নেহারির স্বাদ নেওয়ার জন্য লোকজন ভিড় করে ফজরের নামাজের পর থেকেই। সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যেই তাদের নেহারি বেচাবিক্রি শেষ হয়ে যায়। সে হিসাব করেই আপনাকে যেতে হবে এ হোটেলে।
এ রেস্তোরাঁটি যিনি করেছিলেন, তাঁর নাম নাসির মহাজন। সাঁইত্রিশ বছর আগে এ ব্যবসা শুরু করেন তিনি। নাসির মহাজন এখন বেঁচে নেই। তাঁর ছেলেরা বহু দিন এ ব্যবসা চালিয়েছেন। চট্টগ্রামের রোস্তোরাঁ ব্যবসায়ী মো. মোশাররফ এখন ঐতিহ্যবাহী এ দোকানের হাল ধরেছেন। দোকানের মালিকানা বদল হলেও খাবারের মান বদলায়নি। বাবুর্চি আছেন সেই আগেরজনই। রেস্তোরাঁর প্রথমদিককার কর্মচারী মো. জাফর বললেন, 'একসময় এ দোকানে মাংস চলত এক-দেড় মণ। তখন নেহারি ছিল এক টাকা ২৫ পয়সা প্লেট। এখন হয়েছে ২০ টাকা। এখানে খেতেন ট্রাকস্ট্যান্ডের লোকজন ও মিউনিসিপ্যাল অফিসের কর্মচারীরা। আসতেন কোর্টের লোকজনও।' এর পরই নাসির মহাজনের হোটেলের খাবারের নাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এখানকার নেহারি খাওয়ার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ভিড় করে কাকডাকা ভোরেই।
নাসির মহাজন নেহারি তৈরি করতেন সীমিত পরিমাণের। ৮০ প্লেটের বেশি করতেন না কখনোই। নতুন মালিক নাসির মহাজনের গুণাগুণ ঠিক রেখেছেন। তিনিও প্রতিদিন তৈরি করেন ৮০ প্লেট নেহারি।
নাসির মহাজন যেভাবে নেহারি তৈরি করতেন, বর্তমান মালিকও একইভাবে তৈরি করেন। কেউ বুঝতেই পারেনি, রেস্তোরাঁর মালিক বদল হয়েছে। প্রতিদিন বাজারের সেরা গরুর পা কিনে আনেন এ খাবার তৈরির উপকরণ হিসেবে। একটা পায়ের হাড়কে করেন আট খণ্ড। তারপর পাউরুটি পানিতে চটকিয়ে মসলা ও পানি মিশিয়ে হাড্ডি জ্বাল দেওয়া হয় সারা রাত। সকালে সেটাই নেহারি হয়ে ওঠে আসে খাবার টেবিলে।
মসলা মেশানোর কৌশলের ওপরই নির্ভর করে এর আসল স্বাদটা। বাবুর্চির দক্ষতার কারণেই এ হোটেলের নেহারি সুস্বাদু হয় বলে মনে করেন হোটেল সংশ্লিষ্টরা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন