রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১০

ডায়াবেটিস রোগীর নাস্তা

ডায়াবেটিস রোগীর নাস্তা

আমাদের জানা ভালো, দিনে রাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বেলার খাবার তাহলো প্রাত:রাশ। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তো বটেই।
নিউইউর্ক সিটির নিউইউর্ক প্রেসবাইটেরিয়ান হাসপাতালে সেন্টার ফর ডায়াবেটিসের ডায়াবেটিস এডুকেটার ও ডায়েটিশিয়ান এরিকাত্ররাসিস বলেন, "বিপাকীয় বিচারে ও পুষ্টির বিচারে প্রাত:রাস রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণের বড় ভূমিকা নিতে পারে। শরীরকে এটি এমন পুষ্টি যোগায়, যাতে সারাদিন শরীরে বলশক্তি পাওয়া যায়।"
নিউইউর্ক সিটির বাথ ইসরায়েল মেডিকেল সেন্টারের ফ্রিডম্যান ডায়াবেটিস ইনস্টিটিউটের অন্য এক ডায়াবেটিশিয়ান জেনিফার রেজেস্টার বলেন, ডায়াবেটিক অনেক রোগী রক্তের সুগার মান নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রাত:রাশ এড়িয়ে যান। যা ঘটে তা হলো, তাদের রক্তের সুগার মান অনেক নিচে নেমে আসে। ফলে তাঁরা খুবই ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ে আর এজন্য মধ্যহ্নে অতিভোজ করে, অতিভোজন করে রাতের বেলাতেও। এতে ঘটে রক্তের সুগার মানে চড়াই উৎরাই। অথচ সেব্যক্তি ভালো করে প্রাত:রাশ খেলে এমন বিপত্তি ঘটতোনা।
যদি কোনো লোক সকালবেলা উঠে দেখেন রক্তের সুগার মান উচুতে যেমন ৩০০ মিলিগ্রাম তবু প্রাত:রাশ খেতে হবে, তবে এতে প্রোটিনের প্রাধান্য থাকবে। শর্করা সামান্য খেলে হয়, যেহেতু রক্তের শর্করা উচুতে। আর সেজন্য একে আর বাড়ানোর প্রয়োজন নাই। তবে পরের বেলার খাবারে যখন রক্তের সুগার নেমে আসবে, তখন আবার শর্করাকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ঢোকাতে পারবো খাবারে।

কি খেতে হবে ?

প্রাত:রাশে চাই সুষম খাবার। ভালো প্রাত:রাশে থাকবে প্রোটিন, মেদ ও জটিল শর্করা যেমন আটার রুটি বা ঢেঁকিছাটা লাল চাল বা ওটমিল্ । ফল খেতে হয়। জার ফলের জুসের চেয়ে গোটা ফল অনেক ভালো। ফলের জুস খেলে রক্তের সুগার মানের যে উঠানামা হয়, গোটা ফল খেলে তা হয়না। তাই কমলার রসের চেয়ে গোটা কমলা, নাসপাতি বা আপেল অনেক ভালো। প্রাত:রাশের জন্য অনেকগুলো ভালো বিকল্প আছে যেমন-
০০ ১ টি ডিমের শ্বেত অংশের ওমলেট, একসস্নাইস আটার রুটি, এক টুকরো ফল।
০০ একটি ডিমের স্যান্ডউইচ, আটার রুটি আর এক টুকরা ফল।
০০ প্রতিসপ্তায় ৪টি ডিমের বেশি খাওয়া ঠিক হবেনা সেজন্য ডিমের শ্বেত অংশের স্যান্ডউইচ নিলে ভালো, অথবা একটি ডিমের সঙ্গে দুটো বা তিনটি ডিমের শ্বেতঅংশের ক্্রাম্বল করে খেতে পারেন।
০০ এক বাটি ওটমিল তৈরি করুন। অর্ধেক বাটি ওট বাজইচূর্ণ নিয়ে। শস্যখাদ্য বেশি খাওয়া হয়ে যায় সহজেই, তাই কতখানি নিলেন তা বেশি গুরতি্বপূর্ণ।
০০ দুই সস্নাইস গমের রুটি এবং পিনাট মাখন দিয়ে তৈরি স্যান্ডউইচ খাওয়া যায়।
০০ দধি, বাদাম ও ফল। টকদই, বাদাম এবং ফল।
০০ খই/মুড়ি/পপকর্ন এবং ননীহীন দুধ।
০০ আশযুক্ত শস্য খেলে রক্তের সুগার থাকে সুনিয়ন্ত্রণে।

অধ্যাপক ডা: শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক
ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস
বারডেম, ঢাকা।

সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০১০

ঢাকাই খাবার : নাসির হোটেলের নেহারি

ঢাকাই খাবারনাসির হোটেলের নেহারি ধোলাইখালের লোহালক্কড়ের দোকানগুলো পার হয়ে কলতাবাজার নাসির উদ্দিন সরদার লেনে পৌঁছলেই চোখে পড়বে সাদামাটা একটি রেস্টুরেন্ট। নাম নাসির হোটেল। এর প্রধান আকর্ষণ সকালের নাশতার সঙ্গে নেহারি। এ খাবারটির স্বাদ নিতে ফজরের নামাজের পরপরই লাগে ভিড় ।

ঢাকার আদি বাসিন্দাদের সকালের নাস্তায় প্রিয় একটি খাবার নানরুটির সঙ্গে নেহারি। অনেকের পছন্দ আবার নেহারি-পরোটার যুগলবন্দিটাও। আর নেহারি নামের এ খাবারটি তৈরির প্রধান উপকরণ গরুর পায়ের হাড়। এ হাড় জোগাড় করাও কিন্তু খবি একটা সহজ কাজ নয়। নেহারি তৈরির পদ্ধতিটাও বেশ জটিল। সব মিলিয়ে ঘরে নিয়মিত নেহারি তৈরি হাঙ্গামার ব্যাপারই বটে। কিন্তু ঢাকাইয়াদের অনেকেরই প্রতিদিনের নাস্তার সঙ্গে চাই নেহারি। তাই পুরান ঢাকার প্রায় সব রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন তৈরি হয় মুখরোচক এ খাবার। তবে মজাদার এ খাবার তৈরির ক্ষেত্রে অন্য সব হোটেলের চেয়ে এগিয়ে আছে নাসির হোটেল।
ধোলাইখালের লোহালক্কড়ের দোকানগুলো পার হয়ে কলতাবাজার নাসির উদ্দিন সরদার লেনে পেঁৗছলেই চোখে পড়বে সাদামাটা হোটেলটি। এর প্রধান আকর্ষণ সকালের নাস্তার সঙ্গে নেহারি। নেহারির স্বাদ নেওয়ার জন্য লোকজন ভিড় করে ফজরের নামাজের পর থেকেই। সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যেই তাদের নেহারি বেচাবিক্রি শেষ হয়ে যায়। সে হিসাব করেই আপনাকে যেতে হবে এ হোটেলে।
এ রেস্তোরাঁটি যিনি করেছিলেন, তাঁর নাম নাসির মহাজন। সাঁইত্রিশ বছর আগে এ ব্যবসা শুরু করেন তিনি। নাসির মহাজন এখন বেঁচে নেই। তাঁর ছেলেরা বহু দিন এ ব্যবসা চালিয়েছেন। চট্টগ্রামের রোস্তোরাঁ ব্যবসায়ী মো. মোশাররফ এখন ঐতিহ্যবাহী এ দোকানের হাল ধরেছেন। দোকানের মালিকানা বদল হলেও খাবারের মান বদলায়নি। বাবুর্চি আছেন সেই আগেরজনই। রেস্তোরাঁর প্রথমদিককার কর্মচারী মো. জাফর বললেন, 'একসময় এ দোকানে মাংস চলত এক-দেড় মণ। তখন নেহারি ছিল এক টাকা ২৫ পয়সা প্লেট। এখন হয়েছে ২০ টাকা। এখানে খেতেন ট্রাকস্ট্যান্ডের লোকজন ও মিউনিসিপ্যাল অফিসের কর্মচারীরা। আসতেন কোর্টের লোকজনও।' এর পরই নাসির মহাজনের হোটেলের খাবারের নাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এখানকার নেহারি খাওয়ার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ভিড় করে কাকডাকা ভোরেই।
নাসির মহাজন নেহারি তৈরি করতেন সীমিত পরিমাণের। ৮০ প্লেটের বেশি করতেন না কখনোই। নতুন মালিক নাসির মহাজনের গুণাগুণ ঠিক রেখেছেন। তিনিও প্রতিদিন তৈরি করেন ৮০ প্লেট নেহারি।
নাসির মহাজন যেভাবে নেহারি তৈরি করতেন, বর্তমান মালিকও একইভাবে তৈরি করেন। কেউ বুঝতেই পারেনি, রেস্তোরাঁর মালিক বদল হয়েছে। প্রতিদিন বাজারের সেরা গরুর পা কিনে আনেন এ খাবার তৈরির উপকরণ হিসেবে। একটা পায়ের হাড়কে করেন আট খণ্ড। তারপর পাউরুটি পানিতে চটকিয়ে মসলা ও পানি মিশিয়ে হাড্ডি জ্বাল দেওয়া হয় সারা রাত। সকালে সেটাই নেহারি হয়ে ওঠে আসে খাবার টেবিলে।
মসলা মেশানোর কৌশলের ওপরই নির্ভর করে এর আসল স্বাদটা। বাবুর্চির দক্ষতার কারণেই এ হোটেলের নেহারি সুস্বাদু হয় বলে মনে করেন হোটেল সংশ্লিষ্টরা।